আপনি যা খাবেন, আপনার চেহারাতেও তাই ফুটে বেরোবে। সুস্থ জীবনশৈলী বেছে নেওয়ার পথে আমাদের অনেককেই এই প্রচলিত কথাটি শুনতে হয়েছে। কিন্তু এ কথার সত্যতা কতটা? হ্যাঁ, যে খাবার আমরা খাই তার একটা সরাসরি প্রভাব আমাদের শরীরের কার্যকলাপের ওপরে পড়ে এবং সে জন্যই সুস্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার মান ধরে রাখার জন্য সচেতনভাবে খাওয়াদাওয়া করা জরুরি। আমাদের পরের প্রশ্ন: ব্রণ কমানোর জন্য আপনাকে কি কখনও মশলাদার খাবার খেতে নিষেধ করা হয়েছে, অথবা শরীর ঠান্ডা করার জন্য দই খেতে বাধ্য করা হয়েছে? কখনও কি ভেবেছেন আমাদের খাদ্যাভ্যাস আর আমাদের চেহারা, এ দুইয়ের মধ্যে সংযোগ কোথায়? আজ আমরা এ সব প্রশ্নের উত্তর দেব, এবং স্বচ্ছ উজ্জ্বল ত্বক পেতে পেট পরিষ্কার রাখার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা করব।
- প্রথমে বুঝে নেওয়া যাক, পেট আর ত্বক কীভাবে জড়িত
- দৈনন্দিন খাবারে রাখুন প্রিবায়োটিকস ও প্রোবায়োটিকস
- পর্যাপ্ত জল খাওয়া দরকার
- সঠিক খাবার খান
প্রথমে বুঝে নেওয়া যাক, পেট আর ত্বক কীভাবে জড়িত

ত্বক আর পেট, এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ শরীরকে সুস্থ আর কর্মক্ষম থাকতে সাহায্য করে। শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে এই দুটি অঙ্গকে পরস্পরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হয়। পেটের অণুজীবগুলি ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রতিরোধ ক্ষমতা ধরে রাখে ও সুরক্ষিত রাখে, ফলে রক্তে টক্সিন ঢুকে ত্বকে প্রভাব ফেলতে পারে না। এই প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়লে সাইটোকাইন নামে একটি প্রদাহ সৃষ্টিকারী উপাদানের ক্ষরণ হয় যা রক্তে মিশে ত্বকে পৌঁছে যায় এবং তা থেকে ব্রণ বেরোয়। অর্থাৎ পেটের অবস্থা ভালো না হলে ব্রণ বেরোতে পারে, ত্বকে এগজিমার মতো প্রদাহী সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং ত্বক নির্জীব ও নিষ্প্রাণ দেখায়।
দৈনন্দিন খাবারে রাখুন প্রিবায়োটিকস ও প্রোবায়োটিকস

প্রোবায়োটিকস হল উপকারী ব্যাকটেরিয়ার একটি ধরন যা আমরা খাবার বা সাপ্লিমেন্টের মাধ্যমে গ্রহণ করি যাতে পেট, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও সার্বিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে। একাধিক গবেষণায় এ কথা প্রমাণিত হয়েছে যে প্রোবায়োটিকস এগজিমা ও ডার্মাটাইটিসের মতো প্রদাহজনক ত্বকের সমস্যা সক্রিয়ভাবে প্রতিহত করতে পারে। প্রোবায়োটিক খাবার যেমন কম্বুচা, কিমচি, মিসো, দই, কেফির, আচারজাতীয় খাদ্য, ন্যাটো, টেম্পে, এ সবই পেট আর ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ভালো কারণ এ সব খাবারের মাধ্যমে উপকারী মাইক্রোব শরীরে ঢুকতে পারে।
প্রশ্ন হল প্রিবায়োটিকস কী? প্রিবায়োটিকস এমন একটি ফাইবার যা ব্যাকটেরিয়ার খাদ্য হয়ে শরীরে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে। সহজ কথায়, প্রোবায়োটিকসের খাদ্য হিসেবে কাজ করে প্রিবায়োটিকস এবং প্রোবায়োটিকসের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। প্রিবায়োটিক খাবারের মধ্যে রয়েছে কাঁচকলা, আপেল, রসুন, পেঁয়াজ, আর্টিচোক, ব্রকোলি, ফুলকপি, বিন এবং মুসুর ডাল।
পর্যাপ্ত জল খাওয়া দরকার

শরীর থেকে টক্সিন বের করে সার্বিক স্বাস্থ্য ভালো করতে জল খাওয়া খুব দরকার। ত্বক আর পেট সুস্থ রাখতে প্রতিদিন আট গেলাস জল খেতে হবে। এত জল খেতে ইচ্ছে না করলে জলে রকমফের আনতে পারেন। সকালে উঠে এক গেলাস গরম জলে লেবু দিয়ে খান। জলে লেবুর চাকা, পুদিনা পাতা বা স্ট্রবেরি, তরমুজের মতো ফলের টুকরো দিয়ে ফ্লেভার্ড ওয়াটার বানিয়ে নিতে পারেন। সেলেরি জুস খাওয়াও খুব উপকারী। সেলেরিতে ভিটামিন কে, সি, এ আর তার সঙ্গে একগুচ্ছ জরুরি খনিজ উপাদান রয়েছে যা পিএইচ ভারসাম্য বজায় রাখে এবং শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়। পেট আর ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য এটাই দরকার!
সঠিক খাবার খান

সবুজ শাকসবজি শরীরের পক্ষে খুব উপকারী। প্রথমত পেটের পক্ষে হালকা এবং তার সঙ্গে সবুজ শাকসবজির আরও নানা স্বাস্থ্যকর দিক রয়েছে। বেশি উপকারিতা পেতে ফলের রসের বদলে গোটা ফল খান, কারণ তাতে প্রিজার্ভেটিভ বা চিনি থাকবে না। হালকা কিছু খেতে ইচ্ছে করলে পপকর্ন খান, এটি পেটের পক্ষে উপকারী। তবে বাটার বা ক্যারামেল পপকর্ন খাবেন না, বাড়িতেই তৈরি করে নিন।
আর একটা জরুরি বিষয় হল, খাবার খুব ভালো করে চিবিয়ে খেতে হবে। কারণ খাবার চিবিয়ে খেলে শরীর বেশি করে উৎসেচক বা এনজাইম তৈরি করে যা খাবার ভেঙে দিয়ে তাকে স্বস্থানে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে হজম করতে সাহায্য করে। তাই খেতে খেতে সিনেমা বা ওয়েব সিরিজ দেখবেন না, কারণ টিভি বা ভিডিও দেখতে দেখতে মানুষ দ্রুত খেয়ে ফেলেন, যা কখনওই কাম্য নয়।
Written by Manisha Dasgupta on 23rd Feb 2022